পোস্টগুলি

গগনে গগনে ডাকে দেয়া

  আজ ২৫ জুন। এই তো, চার দিন আগেই, পেরিয়ে গেল ২১ জুন। বিশ্ব সংগীত দিবস। বছরে কুল্লে ৩৬৫টা দিন থাকা সত্ত্বেও, আচমকা এই দিনটির প্রতি সংগীতের কেন এমন বিশেষ মমতা? আসলে, ২১ জুন বছরের সব চেয়ে দীর্ঘ দিবস। সূর্য আর পৃথিবীর কী-এক উল্লম্ব লুকোচুরিতেই ঘটে যায় ম্যাজিক — দিন হয় দীর্ঘ, রাত হয়ে আসে সব চেয়ে ছোট। এমন এক উজ্জ্বল ও রোদেলা দিনে রবীন্দ্রনাথের যে-গানটা আমার মনে পড়ল, তা অবশ্য নিতান্তই অসঙ্গত এবং অস্বাভাবিক। কলকাতায় এখন সবে পা রেখেছে আষাঢ়, দিনমানে আকাশের উপকণ্ঠে যত্রতত্র গজিয়ে উঠছে মেঘ, নিবে আসছে আলো। তারই সঙ্গে তাল মিলিয়ে কি কে জানে, আমার মনে আসছিল রবীন্দ্রনাথের ‘ছায়া ঘনাইছে বনে বনে।‘ সুমিত্রা সেনের গলায়।   কী এক অব্যাখ্যাত জাদু রয়ে গেছে এই গানে, ভাবছিলাম, যার জন্য এক বার এ-গান মনে পড়লে সারা দিন, সারা রাত এর আমেজে না-ভেসে উপায় নেই। কী সেই রহস্য? ‘ছায়া ঘনাইছে’ — এই বাক্যটির সরল, মেদুর অথচ তীব্র নাশকতাময় ইঙ্গিত? রবীন্দ্রনাথ, যিনি ভীষণ আলোময়, তাঁর কলমে অন্ধকারের এমন স্তব? না কি, সুরের সাঙ্ঘাতিক শারীরিকতা, যার জন্য মনে হয় এ-গান যেন রাত্রির নর্মসহচরী — যে এক বার শরীরে সেঁধিয়ে গেলে আর ...

বৃ ষ্টি বি কে ল

১ মালবিকা কানন ম্যাজিক জানেন। কথাটা অবশ্য প্রথম ভাবছি না। এর আগেও, ওঁর গলায় ছায়ানটে আগরা আর রামপুর-সাহসওয়ান ঘরানার বন্দিশ 'ঝনন ঝনন বাজে বিছুয়া' শুনেও একই কথা মনে হয়েছিল। কিঞ্চিৎ দ্রুত লয়ের গান থেকে মালবিকা কানন খুলে নেন যাবতীয় জড়োয়া, আর লয়কে করে দেন ঈষৎ ঢিমে। তাতেই ঘটে যায় অভাবিত সমস্ত ম্যাজিক। সিদ্ধ জাদুকর যেমন মিহি সন্তর্পণে তাঁর আস্তিনের রুমাল থেকে টেনে আনেন খরগোশ-- মালবিকা কাননের গান শুনলেও, আমি নিশ্চিত, মনে হতে পারে: এ রকমই ছিল তবে বন্দিশের চেহারাটা? ছায়ানটের বহিরঙ্গের ভেতর তবে এত দিন ঘাপটি মেরে ছিল এমনই শান্ত ও সমাহিত সুন্দরতা, এমন নিস্পন্দ আবহ, এমন তুলোট কাগজের মত ভেসে যাওয়া সুরের প্রাণায়াম? কী করে জানতাম রাগের এমন অপ্রত্যাশিত গড়ন-- মালবিকা কানন কখনও না-চিনিয়ে দিলে? ২ একই ভাবে, গৌড় মলহার রাগটাও এসেছে আমার কাছে, নানা চেহারায়। গৌড় মলহারকে মনে হয় বৃষ্টি-ফুরিয়ে আসা স্নাত বিকেলের রাগ। আকাশে পায়চারি করছে ভাসমান মেঘখণ্ড, ইতস্তত। সদ্য বর্ষায় ফুটে ওঠা বাগানের ফুলটির মতই, এই রাগে থেকে থেকে জানান দেয় মালবিকা কানন আর মীরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলার সজলতা। গত কাল গৌড় মলহার শুনছিলাম ওঁর আর...

গোটা দেশজোড়া বারণাবত

ছবি
সকালে, হঠাৎই, কী কারণ কে জানে-- মাথার মধ্যে কতগুলো শব্দ ভেসে উঠল। কথাগুলো এ-রকম: ‘গোটা দেশজোড়া বারণাবত’। এই সেই ছবি। প্রথম পাতা, আনন্দবাজার, ১৮ জুন ২০২২। স্রেফ এইটুকুই। এবং, মনে-মনে বলা মাত্র, টের পেলাম, একটা স্পষ্ট ছন্দ লুকিয়ে রয়েছে শব্দগুলোর ভেতরে। মাত্রাবৃত্ত। সময় একটু যেতে না যেতে বোধ হল, এ যেন-বা একটা তিন-চার স্তবকওলা কবিতা, বিধাতার পাঠানো সন্দেশ, যার প্রথম স্তবকের শেষ লাইন ‘গোটা দেশজোড়া বারণাবত’, আবার দ্বিতীয় স্তবকের প্রথম লাইন ওই ‘গোটা দেশজোড়া বারণাবত’-ই। ছন্দটা পুরো শরীরে চারিয়ে গেল ক্রমশ-- হয়তো এখনও, মানে যখন এ-লেখা লিখছি, টুকরো টুকরো ছন্দ পাওয়া যাবে শরীর খুঁড়লে পাওয়া যাবে। কিন্তু, বিধাতার অসীম করুণা: কবিতাটা এল না শেষ অবদি। আজ আঠেরোই জুন, কলকাতায় ঝিরঝিরে বৃষ্টি, এলোমেলো ছাঁট, আকাশ গুম-মারা মেঘলা। কালও এমন বৃষ্টি হয়েছিল বিকেলে, আর, জয়ের ওই কবিতাটা আধো-মেঘের ভেতর মনে পড়ছিল বার বার: যেখানে বৃষ্টি স্তিমিত, আকাশে কিছু মেঘপিণ্ড ভাসমান, মাছ-ধরা ছেলের দল মাছ নিয়ে ঘরে ফিরছে, আর এমন গোধূলিমুহূর্তে কবি জিগ্যেস করছেন কোনও এক গৃহবন্দিকে: ‘এখনও কি ইচ্ছে করে তোমার, ওদের সঙ্গে যেতে?’ পরের অম...

আমরা অঢেল শান্তি চাই

আজ্ঞে মাননীয় এবং মাননীয়ারা-- সুশীল এবং সুশোভিত-- বাংলা আকাদেমিক এবং নন-আকাদেমিক-- খবর জানেন নিশ্চয়ই, রোদ্দুর রায় বলে একটা লোক গ্রেফতার হয়েছে। কী সব গাঁজাটাজা খেয়ে খিস্তিখাস্তা করেছিল, তাও আবার কি-না, ছি ছি, দিবি তো দে, সোজা দিদিকে। আরে ধম্মাবতার, বলুন এত পাপ কোথায় রাখে লোকটা, দাড়িতে না মাথায়, বগলে না পেছনে-- এই দেখুন শালা খারাপ কথা বলে ফেলছি, না না এ সব বলব না, আপনারা তো জানেনই আমার মুখ ভীষণ পরিষ্কার, আমার পেছন ভীষণ পরিষ্কার, আমি খারাপ কথা বলি না, দিদির নামে তো আরওই না। কোথাকার বাচাল পাবলিক জুটেছে ভাই, নিজে ইউটিউব খুলেছিস খোল, হাসি কর মজা কর প্রমোদ কর জলসা কর, কে বারণ করছে। আফটার অল আমাদের রাজ্যের তো এটাই বিধান, আমরা ২৭৫ দিন বন্ধ রাখি ইস্কুল, আমাদের রাজ্যে পড়াশুনো মানে ডুমুরের ফুল, কিন্তু অত সিরিয়াস কথা বলে কী হবে ভাই? খালি নেগেটিভিটি, দুত্তোর। তাচ্চেয়ে সিরিয়াল দেখ পারলে। সিরিয়াস না হলেই হল। কী বদ লোক শালা, তুমি যে রাজ্যের বাসিন্দা তারই নামে গালিগালাজ করো, তারই নির্বাচিতা মুখ্যমন্ত্রীর নামে অসভ্য ভিডিও ছাড়ো ইউটিউবে। তুমি মহিলাদের সম্মান জানো না, গলা নামিয়ে কথা বলতে হয় শেখো নি, জানোই না...